
মাত্র বেক করা একটি কেক মাত্র ওভেন থেকে বের হলো। আপনার জিহবায় পানি আনতে। এটির ঘ্রাণ এবং চেহারাই যথেষ্ট। সুতরাং আপনি এতে কামড় বসানোর আগেই আপনার হজমতন্ত্র কিন্তু কাজ আরম্ভ করে দিয়েছে।
প্রথম টুকরাটি আপনার মুখে প্রবেশ করার সাথে সাথে আপনার হজমতন্ত্রের অনেকগুলো অঙ্গ কিন্তু সক্রিয় হয়ে উঠে। দেখে নেয়া যাক শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কিভাবে আপনার হজমতন্ত্র কাজ করে থাকে।
মুখগহবর এবং লালা নিঃসরনকারী গ্রন্থিঃ
আপনি কেকটিতে প্রথম কামড় বসানোর সাথে সাথে আপনার লালা নিঃসরণকারী গ্রন্থিগুলো লালা উৎপাদন আরম্ভ করে। লালা খাবারটিকে পিচ্ছিল রাখতে এবং ভেঙ্গে ফেলতে সাহায্য করে। আপনার মুখগহবরে লালা নিঃসরনকারী গ্রন্থির পাশাপাশি তিন জোড়া বড় আকারের গ্রন্থি রয়েছে যেগুলোকে বলা হয়-প্যরোটিড, সাবলিঙ্গুয়াল এবং সাবম্যান্ডিবুলার গ্রন্থি। দিনে আপনি প্রায় ১ লিটারের মত লালা উৎপাদন করেন।
যদিও এখানকার সবকিছু ক্যামিকালী হয়ে থাকে না। আপনি যখন কেকটির স্বাদ নিতে থাকেন তখন আপনার দাঁত এটিকে ভাঙ্গার কাজ করে এবং আপনার জিহবা এটিকে লালার সাথে মিশিয়ে ফেলে। এর ফলে পাইটি একটি নরম, আদ্র এবং গোলাকার বস্তুতে পরিণত হয় যেটি আপনি সহজে গিলতে পারেন।
এসোফেগাস/খাদ্যনালীঃ
আপনি যখন কেকের টুকরাটি গিলে ফেলছেন তখন আপনার মুখের এবং গলার পেশীগুলো এটিকে আপনার খাদ্যনালীর উপরিভাগে পাঠিয়ে দেয় (অর্থাৎ যে টিউবের মাধ্যমে আপনার গলা ও পাকস্থলী সংযুক্ত হয়েছে)। আপনার খাদ্যনালীর দেয়ালে অবস্থিত পেশীগুলো একের পর এক ঢেউয়ের সৃষ্টি করে এবং এর মাধ্যমে পাইটি আপনার পাকস্থলীতে প্রবেশ করে। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় পেরিসটালসিস যেখানে পাইয়ের দলার পেছনের পেশী সংকুচিত হয় এবং এটিকে সামনে ঠেলে দেয়। আবার দলার সামনের ভাগের পেশীগুলো শিথিল হয় এর ফলে খাদ্যটি কোন বাধা ছাড়াই সামনে এগিয়ে যায়।
যখন পাইয়ের দলাটি আপনার খাদ্যনালীর শেষভাগে পৌঁছে যায়, খাবার থেকে নির্গত এক ধরনের চাপের কারনে ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়। এতে এসোফেগিয়েল স্ফিঙ্কটার নামক ভাল্ব শিথিল হয় এবং খাবারটি পাকস্থলীতে প্রবেশ করে।
পাকস্থলীঃ
পাকস্থলীতে প্রবেশের পর খাবারটি আরো ভেঙ্গে যায়। শক্তিশালী পেশীর সহায়তায় আমাদের পাকস্থলী খাবারটিকে আরো ছোট ছোট টুকরায় চূর্ণ করে ফেলে। এ সময় আপনার পাকস্থলীর হজমগ্রন্থীগুলো এসিড এবং এনজাইম উৎপন্ন করে যেগুলো খাবারের সাথে মিশে এটিকে একটি ঘোলাটে অর্ধ পানীয় অথবা পেস্টের মত বস্তুতে রুপান্তরিত করে যেটিকে বলা হয় চাইম। চাইমটি ভালোভাবে মিশ্রিত হলে পেশীর সংকোচনের ফলে সৃষ্ট ঢেউয়ের মাধ্যমে এটি পাইলোরাস নামক ভাল্বের মধ্যে দিয়ে আমাদের ক্ষুদ্রান্তের উপরিভাগে (ডিউডেনাম) প্রবেশ করে। পাইলোরাস প্রায় ৮ মিলিমিটার চাইম একবারে নির্গত করতে পারে। অবশিষ্ট চাইম এ সময় আরো ভালোভাবে মিশ্রিত হওয়ার জন্য রয়ে যায় ক্ষুদ্রান্তের উপরিভাগে।
অগ্ন্যাশয়, যকৃৎ এবং গলব্লাডারঃ
আপনার ক্ষুদ্রান্ত্রের উপরিভাগে (ডিউডেনামে) হজম প্রক্রিয়া চলমান থাকে যখন পাকস্থলীতে অবস্থানকারী চাইম আপনার অগ্নাশয়, যকৃৎ এবং গলব্লাডার থেকে নির্গত বিভিন্ন হজমকারী জুসের সাথে মিশ্রিত হয়ঃ
- অগ্নাশয়ঃ আমাদের অগ্নাশয় বিভিন্ন হজমকারী এনজাইম উৎপন্ন করে যেগুলো প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং ফ্যাটকে ভেঙ্গে ফেলে।
- যকৃৎঃ যকৃৎ হতে বাইল নিঃসৃত হয় যেটি ফ্যাট হজমে সহায়তা করে।
- গলব্লাডারঃ গলব্লাডারে বাইল জমা হয়। যখন ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার আমাদের খুদ্রান্ত্রের উপরিভাগে (ডিউডেনামে) প্রবেশ করে, গলব্লাডার থেকে বাইল ডাক্ট সমূহের ভেতর দিয়ে ক্ষুদ্রান্ত্রে বাইল নিঃসৃত হয়।
ক্ষুদ্রান্ত্রঃ
হজমের প্রক্রিয়া চলতে থাকে যখন আপনার ক্ষুদ্রান্ত্রের দেয়াল হতে নিঃসৃত বিভিন্ন জুসের সাথে অগ্নাশয় হতে নিঃসৃত বিভিন্ন জুস খাবারের সাথে মিশ্রিত হয়। এক সময় যেটা ছিল কেক সেটা আপনার ক্ষুদ্রান্ত্রের মধ্যভাগে অর্থাৎ জেজুনামে প্রবেশ করে। এখানে খাবারটি বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদানে ভাগ হয়ে যায় যেগুলোকে শোষণ করা হয়। এরপর এটি আপনার ক্ষুদ্রান্ত্রের সবচেয়ে বৃহৎ অংশ অর্থাৎ ইলিয়ামে প্রবেশ করে যেখানে বাদবাকি পুষ্টিকর উপাদানগুলোকে আইলিয়ামের দেয়ালের মাধ্যমে শোষণ করা হয়।
খাবারটি যখন ইলিয়ামের শেষভাগে প্রবেশ করে তখন এতে থাকে পানি ও সোডিয়াম এবং ক্লোরাইডের মত কিছু ইলেক্ট্রোলাইটস, গাছের আঁশের মত বর্জ্য পদার্থ এবং মৃত কোষ যেগুলো আপনার হজমতন্ত্রের দেয়াল থেকে ঝরে পড়ে।