
হাইলাইটস
- রক্তশূন্যতায় আপনার শরীরে লৌহ কণিকা কম থাকে
- লৌহ ঘাটতি রক্তশূন্যতার অন্যতম কারন
- রক্তশূন্যতার চিকিৎসায় আপনাকে লৌহ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে
আপনি কি সবসময় ক্লান্ত বোধ করেন অথবা আপনার ত্বক কি ফ্যাকাসে দেখায়? সম্ভবত বিশ্রাম আপনাকে সমাধান দিবে না। রক্তশূন্যতায় আপনার শরীরে লৌহ কণিকা কম থাকে। সুস্থ লৌহ কণিকা হলো হিমোগ্লোবিনের একটি অংশ যেটির মাধ্যমে রক্তে অক্সিজেন যুক্ত হয়। এর অর্থ হচ্ছে আপনার রক্তে লোহ কণিকা কম থাকলে অথবা হিমোগ্লোবিন কম থাকলে আপনার শরীরে কোষগুলো পর্যাপ্ত অক্সিজেনের অভাবে ঠিক মত কাজ করতে পারে না। এতে করে বেশীর ভাগ সময় আপনি ক্লান্ত বোধ করেন। রক্ত শূন্যতা অনেক কারনেই হতে পারে তবে লৌহ ঘাটতির কারনে বেশীর ভাগ রক্ত শূন্যতা হয়ে থাকে। হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের জন্য আমাদের হাড়ের ভেতরকার মজ্জার লৌহের প্রয়োজন। শরীরে পর্যাপ্ত লৌহ না থাকলে আমাদের শরীর লৌহ কনিকার জন্য হিমোগ্লোবিন উৎপাদন করতে পারে না। ভারতে প্রচুর নারী ও শিশু রক্ত শূন্যতায় ভুগছে। অন্তস্বত্বা নারীর ক্ষেত্রে লৌহ ঘাটতি জনিত রক্ত শূন্যতা জটিলতার কারন হতে পারে এবং শিশুদের ক্ষেত্রে এ জাতীয় রক্ত শূন্যতা তাদের ভাষাগত বিকাশ এবং স্নায়ুর সমস্যার কারন হতে পারে। এ কারনে আমাদের রক্তশূন্যতা কে হালকাভাবে নেওয়া উচিত না। রক্ত শূন্যতার রয়েছে বেশ কিছু ঘরোয়া সমাধান যেগুলো চর্চা করলে অবস্থার উন্নতি হতে পারে।
রক্ত শূন্যতার উপসর্গঃ
রক্তশূন্যতার বেশীর ভাগ উপসর্গ আমাদের জানা এবং এসব উপসর্গকে লক্ষণীয় নাও হতে পারে অথবা আমরা অন্য কোন কিছু ভেবে থাকতে পারি। সুতরাং, নিম্নের কোন উপসর্গ দীর্ঘদিন আপনার হতে থাকলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমান পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া জরুরী।
- সর্বদা ক্লান্ত বোধ করা
- ত্বক ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া
- প্রচুর পরিমাণে চুল পড়া
- প্রানশক্তির অভাব
- দ্রুত হৃদস্পন্দ
- শ্বাসকষ্ট অনুভব করা
- সবসময় মন খারাপ থাকা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী একজন পুরুষের রক্তে প্রতি ডেসিলিটারে ১৩ গ্রামের কম এবং নারীর ক্ষেত্রে প্রতি ডেসিলিটারে ১২ গ্রামের কম হিমোগ্লোবিন থাকলে তিনি রক্তশূন্যতায় ভুগছেন। তবে, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সামান্য যত্ন নিলে এবং সতর্ক থাকলে রক্তশূন্যতার চিকিৎসা করা এবং এ থেকে পরিত্রান পাওয়া সম্ভব।
২য় খণ্ড
আপনি রক্তশূন্যতায় ভুগলে প্রথমেই লৌহ সম্পূরক গ্রহনের ব্যাপারে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং যে সব খাবারে লৌহ রয়েছে সেগুলো অধিক পরিমাণে গ্রহন করুন। আমরা চেষ্টা করেছি রক্তশূন্যতার কিছু ঘরোয়া সমাধান দিতে যার মাধ্যমে আপনি প্রানশক্তি ফিরে পেতে পারেন।
রক্ত শূন্যতার কিছু প্রাকৃতিক সমাধান আপনি চেষ্টা করে দেখতে পারেন
১। অধিক পরিমাণে ভিটামিন সি গ্রহন করুন
রক্তশূন্যতায় আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা লোপ পায় যার কারনে আপনার সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। পর্যাপ্ত ভিটামিন সি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি লৌহ শোষণেও সহায়ক। আপনি প্রতিদিন কমলা খেতে পারেন অথবা এক গ্লাস লেবু পানি পান করতে পারেন।

২। হলুদের সাথে টকদই
ডাঃ ভাসান্ত লাড তার ‘ঘরোয়া উপায়ে আয়ুর্বেদিক’ নামক বইয়ে বলেন যারা কাফা ধরনের রক্তশূন্যতায় ভুগছেন তাদের দিনে দুবার সকালে ও বিকালে এক চা চামচ হলুদের সাথে এক কাপ টকদই খাওয়া উচিত। এ জাতীয় রক্তশূন্যতায় শরীর ফুলে যেতে পারে এবং ত্বক ঠাণ্ডা ও আদ্র হয়ে যায়। টকদইয়ের সাথে হলুদ সেবন করলে শরীরের কাফা সমস্যার সমাধান হতে পারে।

৩। অধিক পরিমানে সবজি খান
বিভিন্ন সবুজ সবজি যেমন পালং শাক, সরিষার বীজ, সেলেরি এবং ব্রকলিকে বলা যায় লৌহের অন্যতম উৎস। মনে রাখবেন পালং শাক সেদ্ধ করে খাওয়াই উত্তম কেনোনা কাঁচা পাতায় রয়েছে অক্সালিক এসিড যা শরীরে লৌহ শোষণকে বাধাগ্রস্থ করতে পারে।

৪। পান করুন
তাজা বিট পালং অথবা ডালিমের রস আপনার শরীরে রক্ত তৈরিতে এবং রক্ত বিশুদ্ধকরনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিট পালং এ রয়েছে প্রচুর ফলিক এসিড এবং আপনি এটি আপেল অথবা গাজরের সাথে খেতে পারেন। অন্যদিকে ডালিমে রয়েছে প্রচুর লৌহ এবং তামা ও পটাসিয়ামের মত খনিজ। এই দুটো রস নিয়মিত পান করলে আপনার প্রানশক্তি শুধু বৃদ্ধি পাবে না বরং আপনার রক্ত প্রবাহ ত্বরান্বিত হবে এবং আপনি সতেজ অনুভব করবেন।

৫। তামা নিংড়ানো পানি
আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে তামা নিংড়ানো পানিকে স্বাস্থ্যকর বলে মনে করা হয়। ডাঃ ভাসানত লাড আগের রাতে তামার পাত্রে রাখা পানি পরদিন সকালে পান করতে বলেন। এটি আপনার শরীরে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক খনিজ জোগাবে এবং এই পানি চুল পড়া রোধ করতে বিশেষভাবে উপকারি।

৬। তিলের বীজ
তিলের বীজ বিশেষ করে কালো তিলের বীজ খাওয়ার মাধ্যমে আপনি প্রচুর পরিমাণে লৌহ পেতে পারেন। তিলের বীজ দুই থেকে তিন ঘন্টার জন্য পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। তারপর বীজগুলোকে পিষে পেস্টের মত করে ফেলুন। প্রতিদিন এটি এক চা চামচ মধুর সাথে খাবেন।

৭। কিশমিশ এবং খেজুর
এই শুকনা ফ্লগুলোতে রয়েছে লৌহ এবং ভিটামিন সি। এ কারনে আমাদের শরীর এই খাবারগুলো থেকে দ্রুত এবং কার্যকরভাবে লৌহ শোষণ করে। প্রতিদিন কিছু কিশমিশ এবং একটা অথবা দুটো খেজুর সকাল অথবা মাঝ বেলার নাস্তায় খাওয়া উচিত। এই শুকনা ফ্লগুলো থেকে আপনি তাৎক্ষনিকভাবে প্রানশক্তি পেয়ে যাবেন।
