
আপনি ওজন কমানোর চেষ্টা করুন, ওজন ধরে রাখার চেষ্টা করুন অথবা ওজন বৃদ্ধির চেষ্টা করুন না ক্যলোরীর রয়েছে অপরিসীম গুরুত্ব। ক্যলোরী শুধুমাত্র আপনার ওজন আর ফিটনেসকে প্রভাবিত করে না বরং এটি আপনাকে প্রানবন্ত রাখার গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করে থাকে। হার্ভার্ড এক্সটেনশন স্কুলের প্রফেসর এবং হার্ভার্ড মেডিক্যল স্কুলের রিসার্চ ফেলো র্যচেল পোজেডনিক বলেন “ক্যলোরী আমাদের মস্তিষ্ক, হৃদপিণ্ড, যকৃৎ এবং কিডনির মত আমাদের শরীরের কোষগুলোকে শক্তি যোগায়”। পর্যাপ্ত ক্যলোরী গ্রহন না করলে আমাদের শরীর ও মন অনেক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে পুষ্টির অভাবে।
বিশেষজ্ঞরা নারীদের দিনে অন্তত ১২০০ ক্যলোরী গ্রহনের পরামর্শ প্রদান করেন। এরপরও আপনি হয়তো প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাবে থাকবেন। পোজেডনিক বলেন “১২০০ ক্যলোরী গ্রহনের পর আপনার শরীরের বেশিরভাগ চাহিদা পূর্ণ হবে যাতে আপনি প্রানবন্ত থাকেন তবে এর পরও আপনার অবসাদ লাগতে পারে। সল্প পরিমাণে ক্যলোরী গ্রহনে কোন সুবিধা হয় না। নিউইয়র্কের বিজেড নিউট্রিশনের প্রতিষ্ঠাতা ব্রিগিট জিটলিন বলেন “অনেকে ওজন কমানোর জন্য কম ক্যলোরী গ্রহনকে সর্বোত্তম উপায় হিসেবে মনে করলেও এ ধরনের পদক্ষেপ শরীরের জন্য ক্ষতিকর বটে।
১। সারাদিন ক্লান্ত বোধ করা
জিটলিন বলেন “ক্যলোরী আমাদের প্রাণশক্তির সামর্থ্যক। এ কারনে আমাদের শরীরে ক্যলোরী অনেক কমে গেলে আমাদের প্রাণশক্তিও অনেক কমে যায়।“ যার প্রতিফলন আমাদের সারাদিনের কর্মকাণ্ডে প্রকাশ পায়। পোজেডনিক বলেন “পর্যাপ্ত ক্যলোরী না থাকলে আমাদের শরীর কোষগুলোকে উদ্দীপ্ত করতে পারে না।“ পর্যাপ্ত ক্যলোরী না থাকায় আমাদের শরীর উপস্থিত ক্যলোরীগুলোকে শরীরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডে যেমনঃ মস্তিষ্ক ও হৃদপিণ্ডকে সচল রাখার কাজে নিয়োজিত করে। আমাদের শরীরে অতিরিক্ত ক্যলোরী না থাকলে যে সকল কাজ করতে প্রচুর শক্তির প্রয়োজন হয় তা আমাদের শরীর করতে পারে না।
২। আপনার ওজন পরিবর্তন হবে না
হঠাৎ করে ক্যলোরী গ্রহন কমিয়ে শরীরের ওজন কমানোর চেষ্টা করা উচিত নয়। জিটলিন বলেন “ কারন বেঁচে থাকার জন্য আমাদের শরীর চেষ্টা করে যতটা সম্ভব ক্যালোরী ধরে রাখতে।“ তবে, আশার কথা হচ্ছে এ পরিবর্তনটি সাথে সাথে ঘটে না। তাই কম খেয়ে থাকলে আপনার দুশ্চিন্তার কোন কারন নেই। পোজেডনিক বলেন “ আমাদের শরীরকে উপসের পর্যায়ে আসতে বেশ কিছুটা সময়ের প্রয়োজন হয় এবং এ জন্য শরীরের বেশ কিছুটা ওজন কমেও যায়। যদিও এটির কোন নির্দিষ্ট পরিমান নেই। একেক জনের ক্ষেত্রে সময় ও পরিমান একেক রকম।
৩। ঘন ঘন কোষ্ঠকাঠিন্য
কম খাবার গ্রহন করলে কোষ্ঠকাঠিন্যে দুটি কারনে হতে পারে। প্রথমত, আপনি পর্যাপ্ত না খেলে আপনার শরীর হজমতন্ত্রকে সচল রাখার জন্য দায়ী আঁশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জিটলিন বলেন কম খাবার খেলে আপনার শরীরে পানির পরিমান কমে যায়। এছাড়া, আমাদের শরীর অনেক সময় পিপাসা আর ক্ষুধাকে এক করে ফেলে। এ কারনে ক্ষুধার তাড়না যদি আপনি বুঝতে না পারেন হয়তো আপনি তৃষ্ণার্ত হবার বিষয়টিও বুঝতে পারবেন না। মনে রাখবেন, আপনার শরীরে পর্যাপ্ত পানি থাকলেই শুধুমাত্র খাদ্যে উপস্থিত আঁশ আপনাকে বাথরুমে যেতে সাহায্য করবে।
৪। ঘন ঘন ক্ষুধা পাওয়া
আপনার সর্বক্ষণ ক্ষুধা পাওয়া উচিত নয়। ক্ষুধা পাওয়া অর্থ হচ্ছে আপনার শরীর আপনাকে কোন একটি সংকেত দিচ্ছে। পোজেডনিক বলেন “ক্ষুধা পাওয়ার জন্য দায়ী হরমোনগুলোর মধ্যে অন্যতমগুলো হলো–লেপ্টিন, ঘ্রেলিন এবং কোলেসিসটোকাইনিন। আমরা কি পরিমান খাদ্য গ্রহন করছি তার উপর এই হরমোনগুলোর মাত্রা পরিবর্তিত হয়ে থাকে।“ এক কথায় এই হরমোনগুলো আমাদের মস্তিষ্ককে জানিয়ে দেয় আমরা কখন খাবো এবং কখন আমাদের পেট ভরে গিয়েছে। আপনি পর্যাপ্ত পরিমাণে না খেলে এই হরমোনগুলো সক্রিয় থেকে যায় এবং আমাদের মস্তিষ্ককে আরো খাবারের জন্য সংকেত প্রদান করে।
৫। আপনাকে নিয়ে কেউ কথা বললে আপনি নেতিবাচকভাবে গ্রহন করেন
এই সমস্যাটির একটি ডাকনাম আছে, বলা যায় ক্ষুধা থেকে সৃষ্ট রাগ। পোজেডনিক বলেন খাবারের সাথে সম্পৃক্ত মনের শান্তির অভাবের কারনে এ জাতীয় সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তিনি বলেন “অনেক কারনে খাবারের সাথে মানুষের রয়েছে আত্মিক সংযোগ। খাবার আপনাকে এনে দিতে পারে অনাবিল আনন্দ। এ কারনে একবার খাওয়া কমালে অথবা বন্ধ করলে আপনার নেতিবাচক অনুভুতি হতেই পারে। “
অবশ্য আমাদের স্বাদের এই অনুভুতির জন্য কিছু হরমোনকেও দায়ী করা যায়। পোজেডনিক বলেন “সাধারনত আপনার রক্তে চিনির পরিমান কম থাকলে এ জাতীয় সমস্যার সৃষ্টি হয়। ক্ষুধা সৃষ্টির জন্য দায়ী এপিনেফ্রিন এবং ঘ্রেলিন নামক হরমোন এ জাতীয় সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। কম ক্যলোরী তথা কম খাদ্য গ্রহনের কারনে আপনার মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হতে পারে।
৬। আপনি বেশীরভাগ কম ক্যলোরীর খাবার গ্রহন করলেও কখনো কখনো নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলেন।
জীবনকে উপভোগ করায় দোষের কিছু নেই বরং ভালো থাকার জন্য এটি অনেকটাই প্রয়োজন। এ কারনে আপনি যদি কখনোই খাবার নিয়ে বিলাসিতা না করেন তবে আপনি হয়তো একদিন এতোটাই খেয়ে ফেলবেন যে শেষমেষ অসুস্থ হয়ে পড়বেন। পোজেডনিক বলেন “আপনি যখন নিজেকে কোন কিছু থেকে বঞ্চিত করেন তখন কোনভাবে সে জিনিসটি নাগালে এলে সেটির অপ ব্যবহারের তাড়না এড়ানো অনেকটাই অসম্ভব। আপনি একদিকে যথেষ্ট পরিমাণে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহন করতে চাইছেন কিন্তু অন্যদিকে আনন্দ পাওয়ার জন্য কিছু দারুন খাবার গ্রহনের লোভ ও সামলাতে পারছেন না। নিজেকে বঞ্চিত করলে এক ধরনের অনিয়ন্ত্রিত আচরনের জন্ম হতে পারে আপনার মধ্যে।“
৭। ঘনঘন তৃষ্ণা পাওয়া
পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার গ্রহন না করলে আপনার শরীর খাবারে উপস্থিত গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন খনিজ যেমনঃ ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যগনেসিয়াম থেকে বঞ্চিত হবে। আপনার শরীরে খনিজের পরিমান কমে গেলে ঘন ঘন পিপাসা পেতে পারে। পোজেডনিক বলেন “সোডিয়াম এবং পটাসিয়াম শরীরে পানির সঠিক পরিমান বজায় রাখতে সহায়ক”। ক্ষুধাকে যদি আপনি পেটে ব্যাথার কারন হিসেবে মনে করেন তবে আপনি হয়তো তৃষ্ণার্ত হবার বিষয়টি লক্ষ্যে করবেন না এবং আপনার শরীরে পানির পরিমান কমে যাবে। পর্যাপ্ত পরিমান খনিজ গ্রহন করলেও শরীরে পানির সঠিক পরিমান অবশ্যই আপনাকে বজায় রাখতে হবে।