
- টিকাদানের উদ্দেশ্য হচ্ছে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদানের জন্য প্রস্তুত করা।
- ব্যাথা অথবা জ্বর এ রকম উপসর্গগুলোর মানে হলো আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সঠিক কাজটাই করছে।
- টিকাদানের ফলে সৃষ্ট অস্বস্তি দূর করতে কিছু ঔষধের ব্যাবহার আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কার্যকারিতা ব্যাহত করতে পারে।
কানেকটিকাটের নিউ হ্যাভেনের ইয়েল ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের গবেষকদের মতে আপনি যদি খুব তাড়াতাড়ি কোভিড-১৯’র একটি টিকা গ্রহন করার সৌভাগ্য অর্জন করেন তবে টিকা গ্রহনের পূর্বে প্রদাহ বিরোধী নন স্টেরয়েডিয়াল ঔষধ অর্থাৎ এনএসএইড গ্রহন না করে আপনি চাইবেন টিকাটির কার্যকারিতা যতদূর সম্ভব বৃদ্ধি করতে। এনএসএইডের মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু নামকরা ব্যাথানাশক এবং জ্বরনাশক ঔষধ যেমনঃ এসপিরিন, ইবুপ্রোফেন (এডভিল, মট্রিন) এবং ন্যপরোক্সেন (এলিভ)। এ ঔষধগুলো ফুলে যাওয়া, লাল হয়ে যাওয়া এবং গা গরমের মত উপসর্গের মাধ্যমে ব্যাথা কমায়। এ বিষয়গুলো আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রন করে থাকে।
অন্য যে কোন টিকার মত কোভিড-১৯’র টিকা গ্রহনের পরও ব্যাথা হতে পারে, ফুলে যেতে পারে এবং জ্বর আসতে পারে। এ জাতীয় সামান্য উপসর্গের অর্থ হলো টিকা কাজ করছে এবং আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রয়োজনীয় এন্টিবডি তৈরি করছে যা কিনা আপনার ভেতর ভাইরাস প্রবেশ করলে সেটিকে নিষ্ক্রিয় করে দিবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে টিকার মাধ্যমে সক্রিয় করাকে বলা হয় রিয়েক্টোজেনিসিটি।
জার্নাল অফ ভাইরোলজিতে সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় ইয়েলের গবেষকরা মানুষের ফুসফুসের কোষে এবং আক্রান্ত জীবিত ইদুরে সারস-কোভ-২ ভাইরাসের উপর এনএসএইডের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেন। তাঁরা আলোকপাত করেন ইবুপ্রোফেন এবং মেলোক্সিকাম এ দুটো এনএসএইডের প্রভাবের উপর যেগুলো হাড়ের আঘাতের ক্ষেত্রে এবং আরথাইটিসে ব্যবহার করা হয়। গবেষণায় দেখা যায় যদিও এনএসএইড একদিকে মারাত্মক কোভিড-১৯ সংক্রমণের সাথে সম্পর্কিত সাইটোকিনকে দুর্বল করে দেয় (যা একটি ভালো দিক) অপরদিকে এনএসএইড ভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরের এন্টিবডি উৎপাদন ব্যাহত করে (যা উদ্বেগজনক)।
গবেষণায় অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে অন্যতম এবং ইয়েল ইউনিভার্সিটি অফ মেডিসিনের ল্যাবোরেটরী মেডিসিন বিভাগের ইমিউনোলজিস্ট ক্রেইগ বি উইলেন বলেন “টিকা গ্রহনের ঠিক পরপর আপনার মৃদু উপসর্গ দেখা দিলে চেষ্টা করুন সহ্য করার। তবে, এই সাময়িক উপসর্গ সহ্য করতে না পারলে আমি বলবো এনএসএইডের পরিবর্তে এসিটোমিনোফ্যন ব্যবহার করতে। আমাদের গবেষণায় একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ের তাই কোন সিদ্ধান্ত দেওয়া যাবে না তবে টিকার সাথে এনএসএইডের সম্পর্ক সংক্রান্ত অন্যান্য গবেষণা থেকে তাত্ত্বিকভাবে বলা যায় যে এনএসএইড শরীরের এন্টিবডির উৎপাদনকে ব্যাহত করে”।
২০১৬ সালের এক গবেষণায় দেখা যায় যে টিকা নেবার পর ব্যথা নাশক অথবা জ্বর নাশক ঔষধ গ্রহন করা হলে তা এন্টিবডি উৎপাদনের উপর প্রভাব ফেলে। ব্যাথানাশক ঔষধ যখন টিকা নেওয়ার সময় গ্রহন করা হয়েছিল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সে সময় সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় পাওয়া যায়। তবে, টিকা গ্রহনের পর বিশেষ করে ৫ থেকে ৬ দিন পর যখন ইবুপ্রোফেন সেবন করা হয় এন্টিবডি উৎপাদন খুব একটা বাধাগ্রস্থ হয়নি। তবে, টিক গ্রহনের ১ থেকে ৩ দিনের মধ্যে এন্টিবডি উৎপাদন কম ছিল বলে দেখা যায়।
ইয়েলের গবেষণায় এন্টিবডির দীর্ঘ মেয়াদী উৎপাদনের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্তে আসা যায়নি কেনোনা যে ইঁদুরটিকে দিয়ে মূল্যায়ন করা হয়েছিল সেটি সারস-কোভ-২ ভাইরাস নিয়ে মাত্র সাত দিন বেঁচেছিল। উইলেন বলেন “আমরা এখন কিছু ইঁদুর নিয়ে কাজ করছি যেগুলো সংক্রমিত হবার পর অধিক সময় বেঁচে থাকে এবং আগামী কয়েক মাসে আরো কিছু তথ্য পরিবেশন করবো। তবে, এনএসএইডের বিভিন্ন মাত্রার ব্যবহারের উপর গবেষণা অব্যাহত থাকবে যেমনঃ আরথ্রাইটিসের রোগীদের এনএসএইডের দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার বনাম মাথা ব্যথা সাড়াতে মাঝে মাঝে ব্যবহার। এছাড়া, গবেষণায় আরো দেখা হবে যে বুস্টার টিকার কখন প্রয়োজন হবে”।
অন্যান্য শারীরিক সমস্যার জন্য আপনার চিকিৎসক এনএসএইড দিয়ে থাকলে সেটি বাদ দিবেন না
উইলেন বলেন আপনি যদি ইতিমধ্যেই কোভিড-১৯’র টিকা গ্রহন করে থাকেন এবং দীর্ঘমেয়াদী রোগের চিকিৎসায় এনএসএইড সেবন করে থাকেন অথবা স্ট্রোক প্রতিরোধে সল্প ডোজে এসপিরিন সেবন করে থাকেন তবে দুশ্চিন্তার কারন নেই। তিনি বলেন “এরপরও আপনি কিছুটা হলেও সুরক্ষিত থাকবেন। অধিক এন্টিবডি আপনার শরীরে থাকার চাইতে ডাক্তার প্রদত্ত ঔষধের সুরক্ষা আপনার জন্য বেশী প্রয়োজন”।
কোভিড-১৯’র টিকা গ্রহনের তারিখ নিশ্চিত হলে টিকা গ্রহনের পূর্বে আপনার কিছু করণীয় রয়েছে। ব্যাথার কথা চিন্তা করে এনএসএইড আগে ভাগে সেবনের চাইতে টিকার ইঞ্জেকশনের ব্যাথা যেনো কম হয় এজন্য বাহুর উপরিভাগে বরফের প্যাক প্রয়োগ করতে পারেন। দুশ্চিন্তা দূর করতে চোখ বন্ধ করে আপনার প্রিয় স্থানটিকে কল্পনা করতে পারেন এবং গভীরভাবে শ্বাস নিয়ে কিছু ব্যায়াম করতে পারেন। টিকা প্রয়োগের মুহূর্তে আপনার বাহুকে ঢিলা রাখুন এবং টিকা দেবার পর বাহু নড়াচড়া করুন। স্বস্তি ব্যাথা কমাতে সহায়তা করতে পারে।
উইলেন বলেন “টিকা গ্রহন করে খুশি হন এবং বিজ্ঞানের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকুন এ কারনে যে বিজ্ঞান এতো দ্রুত একটি টিকা আবিস্কার করতে পেরেছে।
উইলেন বলেন আক্রান্ত হওয়া এড়াতে অথবা ভাইরাস যেনো আপনার মাধ্যমে না ছড়ায় এজন্য কোভিড-১৯’র টিকা নেওয়ার পরও আপনাকে নিম্নবর্ণিত সতর্কতাগুলো মেনে চলতে হবেঃ
- ঘন ঘন হাত ধুতে হবে
- সাবান এবং পানি পাওয়া না গেলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যাবহার করুন
- বাসার বাইরে বের হলে মাস্ক পরিধান করুন
- জনসমাগম এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন
- প্রক্রিয়াজাত এবং চিনিযুক্ত খাবার পরিহার করুন এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খান
- ঘন ঘন পানি পান করুন
- দিনে অন্তত ৩০ মিনিট শারীরিক পরিশ্রম করুন
ঘুমকে গুরুত্ব দিন