
মাইগ্রেন সাধারন মাথা ব্যাথা নয়। আপনার মাইগ্রেন হয়ে থাকলে আপনি জানেন তখন কেমন তীব্র ব্যাথা, মাথা ব্যাথা এবং আলো ও শব্দের প্রতি সংবেদনশীলতা তৈরি হয়। মাইগ্রেন হলে আপনি এটি থেকে মুক্তির জন্য যা করার তাই করবেন।
প্রাকৃতিক উপায়ে আপনি ঔষধ ব্যাবহার না করে মাইগ্রেনের উপশমগুলো কমাতে পারেন। এসব ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে আপনি মাইগ্রেন প্রতিরোধ করতে পারেন অথবা অন্তত মাইগ্রেনের মাত্রা ও স্থিতিকাল কমাতে পারেন।
তবে, তীব্র মাইগ্রেনের ক্ষেত্রে আপনার ঔষধ সেবনের প্রয়োজন হতে পারে। আপনার উচিত আপনার চিকিৎসকের সাথে আলাপ করে চিকিৎসার পরিকল্পনা প্রণয়ন করা।
১। হটডগ এড়িয়ে চলুন
মাইগ্রেন প্রতিরোধে খাবার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিছু খাবার ও পানীয় মাইগ্রেন বাড়াতে পারে। এগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ
- নাইট্রেট সমৃদ্ধ খাবার যেমনঃ হটডগ, সসেজ, প্রক্রিয়াজাত মাংস এবং শুকরের মাংস
- চকোলেট
- টাইরামিন সমৃদ্ধ পনির
- মদ বিশেষ করে রেড ওয়ান
- মনোসোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার
- ঠাণ্ডা খাবার যেমন আইসক্রিম
- প্রক্রিয়াজাত খাবার
- জারিত খাবার
- বীন
- শুষ্ক খাবার
- প্রক্রিয়াজাত দুগ্ধজাত খাদ্য যেমন বাটার মিল্ক, টক দই
কারো কারো ক্ষেত্রে সামান্য পরিমান ক্যাফেইন মাইগ্রেনের উপশম করে থাকে। কিছু কিছু মাইগ্রেনের ঔষধে ক্যাফেইন থাকে। তবে, বেশী পরিমাণে ক্যাফেইন গ্রহন করলে মাইগ্রেন এবং ক্যাফেইন পরবর্তী মাথা ব্যাথার কারন হতে পারে।
প্রতিদিনকার খাবারের একটি ডায়েরী করুন যাতে করে বুঝতে পারেন কী জাতীয় খাবার ও পানীয়তে মাইগ্রেন বৃদ্ধি পায়। আপনি কি খাচ্ছেন এবং খাওয়ার পর কেমন অনুভব করছেন তা রেকর্ড করুন।
২। ল্যাভেন্ডার অয়েল ব্যবহার করুন
ল্যাভেন্ডার অয়েল শ্বসন করলে মাইগ্রেনের ব্যাথার উপশম হয়। ২০১২ সালের একটি গবেষণা অনুযায়ী যারা মাইগ্রেনের ব্যাথার সময় ১৫ মিনিট যাবত ল্যাভেন্ডার অয়েল শ্বসন করেছেন তাদের দ্রুততম সময়ে উপশম লাভ করেছেন। ল্যাভেন্ডার অয়েল সরাসরি অথবা দ্রবীভূত করে শ্বসন করা যায়।

আকুপ্রেসারের মাধ্যমে ব্যাথা ও অন্যান্য উপসর্গ সারানোর জন্য আঙ্গুল ও হাতের মাধ্যমে শরীরের নির্দিষ্ট স্থানে চাপ প্রয়োগ করা হয়। ২০১৪ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায় দীর্ঘমেয়াদী মাথা ব্যাথা ও অন্যান্য সমস্যায় যারা ভুগছেন তাদের জন্য আকুপ্রেসার একটি নির্ভরযোগ্য বিকল্প থেরাপি। অপর একটি গবেষণায় দেখা যায় যে আকুপ্রেসার মাইগ্রেনজনিত বমিবমি ভাব সারাতে সহায়ক।
৪। ফিভারফিউ ব্যাবহার করতে পারেন
ফিভারফিউ একটি পুষ্প জাতীয় ঔষধি যা দেখতে অনেকটা ডেইজির মত। ২০০৪ সালের গবেষণায় অনুযায়ী যদিও ফিভারফিউয়ের মাইগ্রেন উপশমের ক্ষমতা সম্পর্কে কার্যকর প্রমান পাওয়া যায়নি। যদিও অনেকেই দাবী করেন যে ফিভারফিউ তাদের মাইগ্রেনের জন্য উপকারি এবং এটির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই।
৫। গোলমরিচের তেল ব্যাবহার করুন
২০১০ সালের একটি গবেষণা অনুযায়ী গোলমরিচের তেলের অন্যতম উপাদান মেনথল মাইগ্রেনের ফিরে আসা প্রতিরোধ করতে পারে। এতে দেখা যায় কপালে মেনথল দ্রবন প্রয়োগ মাইগ্রেনজনিত ব্যাথা, বমি বমি ভাবের ক্ষেত্রে কার্যকর।

মাইগ্রেনজনিত এবং অন্যান্য মাথাব্যাথা উপশমে আদার পরিচিতি আছে। মাইগ্রেনের জন্য আদা বিভিন্নভাবে উপকারি। গবেষণায় দেখা যায়, আদার গুড়া মাইগ্রেনের মাত্রা ও স্থিতিকাল কমাতে সহায়ক। সুমাট্রিপটান নামক ঔষধে আদার গুড়া রয়েছে এবং এই ঔষধটির তেমন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই।
আমাদের শ্বাস প্রশ্বাস, মেডিটেশন এবং দেহভঙ্গি ব্যাবহার করে আমাদের সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা যায় ই ইয়োগার মাধ্যমে মাইগ্রেনের পুনরাবৃত্তি, স্থিতিকাল কমাতে সহায়ক। রক্তনালীর উন্নতিসাধনের পাশাপাশি ইয়োগা আমাদের দুশ্চিন্তা কমায় এবং মাইগ্রেন আক্রান্ত স্থান থেকে চাপ কমায়।
যদিও গবেষকরা মনে করেন যে ইয়োগাকে মাইগ্রেনের প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে বলা যাবে না কিন্তু তাঁরা বিশ্বাস করেন যে ইয়োগা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি এবং একটি সম্পূরক থেরাপি হিসেবে কার্যকর।
৮। বায়োফিডব্যাক চেষ্টা করুন
বায়োফিডব্যাক শিথিলতা অর্জনের একটি অন্যতম উপায়। এর মাধ্যমে আপনি চাপ মোকাবেলার কৌশলগুলো শিখতে পারবেন। চাপের কারনে আমাদের শরীরে সৃষ্ট প্রতিক্রিয়ার কারনে অনুভুত মাইগ্রেনের ক্ষেত্রে বায়োফিডব্যাক সহায়ক হতে পারে।
৯। খাবারে ম্যাগনেসিয়াম যোগ করুন
আপনার শরীরে ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতির সাথে মাথা ব্যাথা ও মাইগ্রেনের যোগসূত্র আছে। গবেষণায় দেখা যায় যে, ম্যাগনেশিয়াম অক্সাইড অক্সিজেন উৎপন্ন করার মাধ্যমে মাইগ্রেন প্রতিরোধ করে থাকে। এটি মাসিকের সাথে সম্পর্কিত মাইগ্রেনকেও প্রতিরোধ করতে পারে।
যেসব খাবার থেকে আপনি ম্যাগনেশিয়াম পেতে পারেন সেগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ
- এলমোন্ড
- তিলের বীজ
- সূর্যমুখীর বীজ
- ব্রাজিল নাট
- কাজু বাদাম
- পিনাট বাটার
- ওটমিল
- ডিম
- দুধ
২০০৬ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায় সাপ্তাহিক ম্যাসাজ গ্রহন করলে মাইগ্রেনের প্রবনতা কমে আসে এবং ঘুম ভালো হয়। গবেষণায় দেখা যায় যে মাসাজের কারনে চাপ ভালোভাবে অনুভুত হয় এবং আমাদের অভিযোজনের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া ম্যাসাজ আমাদের হৃদকম্পন, দুশ্চিন্তা ও করটিসলের মাত্রা কমাতে সহায়ক।
আপনার মাইগ্রেন হলে আপনি জানেন যে এটির উপসর্গের সাথে মানিয়ে নেওয়া কতটা কঠিন। এর কারনে আপনি আপনার কাজে যেতে পারবেন না অথবা আপনার প্রিয় কর্মকাণ্ডগুলো করতে পারবেন না। উপরের টিপসগুলো ব্যাবহার করলে আপনার কিছুটা উপশম হতেও পারে।
এছাড়া আপনি তাদের সাথে কথা বলতে পারেন যারা আপনার পরিস্থিতি বুঝতে পারবে। আমাদের মাধ্যমে আপনি মাইগ্রেনের অভিজ্ঞতাসম্পন্নদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন। আপনি তাদের চিকিৎসা সম্পর্কিত প্রশ্ন করতে পারবেন এবং যারা চিকিৎসা নিয়েছেন তাদের উপদেশ নিতে পারবেন।